জন্ম থেকেই দুই হাতের কবজি, ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ নেই। আছে শুধু অদম্য শক্তি। তাকে এখন পর্যন্ত আটকে রাখতে পারেনি। প্রতিবন্ধী এ কিশোর এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মন্মথপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের ছাত্র সে।
পরীক্ষা কেন্দ্র যশাই উচ্চ বিদ্যালয়ে সরজমিনে দেখা যায়, দুই হাতের মাঝখানে কলম চেপে প্রশ্নের উত্তর লিখে চলেছে।
নাম নাজমুস সাকিব। সে মমিনপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরদারপাড়া গ্রামে চাষি আজিম উদ্দীনের ছেলে। মায়ের নাম হোসনে আরা। মা বাবা ও তিনভাই পাঁচ সদস্যের পরিবারে সাকিব ছোট। বড় ভাই রোকনুজ্জামান হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগের ২য় বর্ষে পড়ছেন। মেজো ভাই আখেরুজ্জামান দিনাজপুর সরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজে মেকানিক্যাল বিষয়ে ডিপ্লোমার শেষ বর্ষের ছাত্র।
জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৪০ পেয়েছে নাজমুস সাকিব। এসএসসির বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার পরীক্ষা দিলেও মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে। ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা বিভাগে সন্মান ও মাস্টার্স করে সাংবাদিক হতে চায়।
সাকিবের বাবা আজিম উদ্দীন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার এ ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ৫ বছর বয়সে সে হাঁটা শেখে। এর পর তাকে দেয়া হয় ব্রাক স্কুলে। সেখান থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করলে মন্মথপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলে ভর্তি করি। পরবর্তীতে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবারে সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংস্থা কাম টু ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এর আর্থিক সহায়তায় সাকিব লেখাপড়া করছে।
মন্মমথপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই এ স্কুলে পড়ছে নাজমুস সাকিব। জেএসসিতে ভালো ফল করেছে। এসএসসিতেও সে ভালো করবে।
বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাম টু ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এর নির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, নাজমুস সাকিবসহ ৮০জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করছি। দাতা সংস্থা পিআরআইডিই (প্রাইড) এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন।
কাম-টু-ওয়ার্ক এর ফিজিও থেরাপি শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে সাকিবকে কাম টু-ওয়ার্ক একটি কৃত্রিম পা দিয়েছিল। সেটি এখন আর পায়ে সেট হচ্ছে না। এ কারণে সাকিবের চলা ফেরা খুব কষ্ট হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-